স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতা ।। প্রাথমিক স্কুল , হাই স্কুল ও ক্লাবের জন্য
ক্লাব , যেকোনো প্রতিষ্ঠান, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয়ে বলার উপযোগী ৩ টি সহজ বক্তৃতা । ,
1. হাই স্কুলে বলার উপযোগী বক্তৃতা 🇮🇳
প্রিয় প্রধান শিক্ষক/শিক্ষিকা মহাশয়,
সম্মানিত শিক্ষক-শিক্ষিকা, সহপাঠী ও প্রিয় বন্ধুরা—
আজ ১৫ই আগস্ট—আমাদের স্বাধীনতা দিবস। ১৯৪৭ সালের এই দিনে, দীর্ঘ ২০০ বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে আমাদের দেশ ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। এই দিনের জন্য আমাদের দেশের অসংখ্য মানুষ তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। কারও নাম আমরা জানি, কারও নাম হয়তো ইতিহাসের পাতায় লেখা নেই, কিন্তু তাঁদের ত্যাগ আমাদের স্বাধীনতার ভিত্তি গড়ে দিয়েছে।
স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামের ইতিহাস শুধু যুদ্ধের নয়, এটি সাহস, ঐক্য আর আত্মত্যাগের ইতিহাস। মহাত্মা গান্ধীর অহিংস আন্দোলন, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজ, ভগৎ সিং, চন্দ্রশেখর আজাদ, মাতঙ্গিনী হাজরা, বীরসা মুন্ডা, রানি লক্ষ্মীবাই—এঁদের প্রত্যেকের অবদান আমাদের মনে রাখতে হবে।
কিন্তু স্বাধীনতা মানে কি শুধু বিদেশি শাসনের হাত থেকে মুক্তি? না। স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ হলো নিজের দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, শিক্ষিত ও সৎ নাগরিক হওয়া, এবং দেশকে আরও উন্নত ও সুন্দর করে গড়ে তোলা। আমরা যদি অসততা, হিংসা, দুর্নীতি ও বৈষম্য দূর করতে না পারি, তবে প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ আমরা পাব না।
আজ আমরা স্বাধীন দেশে বাস করি, কিন্তু এই স্বাধীনতা বজায় রাখা আমাদের দায়িত্ব। আমাদের স্বাধীনতা যেন কেবল ইতিহাসের একটি তারিখ হয়ে না যায়—এটি যেন প্রতিদিনের জীবনের একটি শপথ হয়ে থাকে।
বন্ধুরা, আজকের দিনে আমাদের প্রতিজ্ঞা করতে হবে—
আমরা দেশের আইন মেনে চলব।
আমরা পরিবেশ রক্ষা করব।
আমরা শিক্ষা, বিজ্ঞান, শিল্প ও সংস্কৃতিতে উন্নতির পথে এগিয়ে যাব।
আমরা সবাই মিলেমিশে থাকব, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একে অপরকে ভালোবাসব।
আমাদের পূর্বপুরুষরা যে স্বাধীনতা আমাদের উপহার দিয়ে গেছেন, সেটি আমরা আগামী প্রজন্মের কাছে আরও উজ্জ্বল রূপে পৌঁছে দেব—এটাই হবে তাঁদের প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধা।
শেষে আমি শুধু একটাই কথা বলতে চাই—স্বাধীনতা শুধু পাওয়ার জিনিস নয়, এটি রক্ষা করার অঙ্গীকার। আমরা যদি সকলে মিলেমিশে কাজ করি, তবে ভারত শুধু বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্র নয়, বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দেশ হিসেবেও পরিচিত হবে।
অনেক বছর আগে, আমাদের দেশ নিজের ছিল না। ব্রিটিশ শাসকেরা আমাদের দেশে রাজত্ব করত। তারা আমাদের নিয়ম বানাত, আমাদের ধন-সম্পদ নিয়ে যেত, আর আমরা নিজের মতো বাঁচতে পারতাম না।
কিন্তু ভাবো তো, কেউ কি চায় নিজের বাড়িতে অতিথি এসে সব দখল করে নিক? তাই আমাদের দেশের সাহসী ছেলেমেয়ে, দাদা-দিদি, কাকা-ঠাকুরদারা রাগে, সাহসে উঠে দাঁড়ালেন—দেশকে মুক্ত করার জন্য।
প্রথমেই বলি এক কিশোরের কথা—ক্ষুদিরাম বোস। বয়স তখন মাত্র ১৮ বছর, কিন্তু হৃদয় ভরা দেশপ্রেম। দেশের জন্য প্রাণ দিতে তিনি একটুও ভয় পাননি। ভাবো, আমরা যখন স্কুলে পড়ি, খেলি—তিনি তখন দেশের স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছেন!
তারপর আছে আমাদের সবার প্রিয় নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু। তিনি বলেছিলেন—"তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব"। তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজ গড়ে তুলে ব্রিটিশদের সঙ্গে সরাসরি লড়াই করেছিলেন।
তোমরা কি বিনয়, বাদল, দীনেশ এর নাম শুনেছো? তিন বন্ধু মিলে সাহস করে ব্রিটিশদের বড় অফিসে গিয়ে আক্রমণ করেছিলেন। তাদের চোখে ভয় ছিল না, শুধু দেশের জন্য ভালোবাসা ছিল।
আবার আছেন মাস্টারদা সূর্যসেন—একজন শিক্ষক, যিনি চট্টগ্রামে নিজের ছাত্রদের নিয়ে অস্ত্রাগারে আক্রমণ করেছিলেন। শিক্ষকও দেশের জন্য অস্ত্র ধরতে পারেন—এটা আমরা ওনার কাছ থেকে শিখি।
আমাদের দেশের মেয়েরাও ছিল অসাধারণ সাহসী। মাতঙ্গিনী হাজরা—একজন বৃদ্ধা মহিলা, বয়স ৭৩ বছর! তিনি পতাকা হাতে মিছিলে হাঁটছিলেন। ব্রিটিশ সৈন্যরা গুলি চালালেও তিনি থামেননি। মুখে বলছিলেন—"বন্দে মাতরম!" গুলি লেগেও পতাকা মাটিতে পড়তে দেননি।
বন্ধুরা, ভাবো তো—ছোট, বড়, ছেলে, মেয়ে—সবাই একসাথে লড়েছে। কেউ জেলে গেছে, কেউ প্রাণ দিয়েছে, কেউ সব কিছু হারিয়েছে, কিন্তু হার মানেনি।
অবশেষে, বহু বছরের সংগ্রামের পর, ১৯৪৭ সালের আজকের দিনে, আমাদের দেশ স্বাধীন হয়। সেদিন পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু দিল্লির লালকেল্লায় পতাকা তুলেছিলেন, আর সারা দেশে আনন্দে মানুষ কেঁদেছিল—হ্যাঁ, কেঁদেছিল খুশির অশ্রুতে।
আজ আমরা সেই আনন্দের দিন উদযাপন করি। কিন্তু মনে রেখো—এই স্বাধীনতা বিনা মূল্যে আসেনি। তাই আমাদেরও দেশের জন্য কিছু করতে হবে—সত্যি কথা বলা, পরিশ্রম করা, পরিষ্কার রাখা, আর একে অপরকে ভালোবাসা।
3. পাবলিক প্লেস / ক্লাব / অফিস -এর উপযোগী বক্তৃতা 🇮🇳
মাননীয় সভাপতি, উপস্থিত অতিথিবৃন্দ, প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
বন্দে মাতরম! জয় হিন্দ!