মহাভারতের সময় থেকেই পালিত হয় রাখী - ইতিহাস জেনে নিন

  


ভারতের নানা উৎসবের মধ্যে রাখী বন্ধন বা রক্ষাবন্ধন একটি বিশেষ দিন, যা ভ্রাতা ও ভগ্নীর পবিত্র সম্পর্ককে উদযাপন করে। এই দিনে বোন ভাইয়ের হাতে রাখী বাঁধে, আর ভাই প্রতিশ্রুতি দেয় যে সে সবসময় বোনকে রক্ষা করবে। শুধু ভাই–বোন নয়, রাখী বন্ধন আজকাল বন্ধু, আত্মীয় কিংবা প্রতিবেশীর মধ্যেও ভালোবাসা ও বিশ্বাসের বন্ধন প্রকাশের উপলক্ষ হয়ে উঠেছে।

রাখী বন্ধনের ইতিহাস ও উৎপত্তি

রাখী বন্ধনের শেকড় বহু পুরনো। ভারতীয় পুরাণ, ইতিহাস ও লোককথায় এর উল্লেখ পাওয়া যায়—

  • মহাভারত: দ্রৌপদী যখন শ্রীকৃষ্ণের আঙুলে কাটা দেখে তাঁর আঁচল ছিঁড়ে বেঁধে দিয়েছিলেন, শ্রীকৃষ্ণ আজীবন তাঁর রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

  • রাজপুত ইতিহাস: কথিত আছে, মেওয়ারের রানি কর্ণাবতী মুঘল সম্রাট হুমায়ুনকে রাখী পাঠিয়ে সুরক্ষার অনুরোধ করেছিলেন।

  • লোকসংস্কৃতি: গ্রামীণ সমাজে রাখী বন্ধন কেবল পরিবারের নয়, প্রতিবেশী ও সমাজের ঐক্যের প্রতীক হিসেবেও পালিত হয়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও রাখী বন্ধনের নতুন অর্থ

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের সময় হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাখী বন্ধনকে নতুন অর্থ দেন—

  • তিনি রাখীকে ভাই–বোনের সম্পর্কের বাইরে সম্প্রীতি ও ঐক্যের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেন।

  • ১৬ অক্টোবর ১৯০৫ সালে রবীন্দ্রনাথ শোভাযাত্রা করে হিন্দু ও মুসলমানদের হাতে রাখী বেঁধে একে অপরের ভ্রাতৃত্বের অঙ্গীকার করান।

  • এর মূল উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা ও সমাজে মিলন–মেলার পরিবেশ সৃষ্টি করা।

রাখী বন্ধনের তাৎপর্য

রাখী বন্ধন শুধু একটি উৎসব নয়—এটি বিশ্বাস, দায়িত্ব ও ভালোবাসার প্রতীক

  • ভাই–বোনের সম্পর্কের গভীরতা প্রকাশ করে।

  • পরিবারে ঐক্য ও সহমর্মিতা বৃদ্ধি করে।

  • সমাজে শান্তি ও ভ্রাতৃত্বের বার্তা দেয়।

  • রবীন্দ্রনাথের উদাহরণ দেখায় যে, উৎসবকে সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ারেও রূপ দেওয়া যায়।

আধুনিক প্রেক্ষাপটে রাখী বন্ধন

আজকাল রাখী শুধু রক্তের সম্পর্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। অনেক সময় বন্ধু, সহকর্মী, এমনকি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষও একে অপরকে রাখী বেঁধে ঐক্য ও মানবতার বন্ধন গড়ে তোলেন।

উপসংহার

রাখী বন্ধন আমাদের শেখায় যে ভালোবাসা ও সুরক্ষার অঙ্গীকারই আসল সম্পর্কের ভিত্তি। আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দৃষ্টিভঙ্গি মনে করিয়ে দেয়—ঐক্য ও সম্প্রীতি সমাজের সবচেয়ে বড় শক্তি। পরিবর্তনশীল এই পৃথিবীতে এমন উৎসব আমাদের মনে করিয়ে দেয়, মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ব ও সহমর্মিতা বজায় রাখাই সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।