২২শে শ্রাবণ নিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা
২২শে শ্রাবণ – রবীন্দ্রবিদায়ের দিন
আজ ২২শে শ্রাবণ। এক মহাপ্রয়াণের শোকগাথা
আজকের এই বিশেষ দিনে আমি আপনাদের সামনে এক গভীর বেদনার স্মৃতির কথা তুলে ধরতে এসেছি। আজ ২২শে শ্রাবণ, আমাদের জাতীয় জীবনের এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের এই দিনে, অর্থাৎ ইংরেজি ৭ই আগস্ট ১৯৪১ সালে, কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে মহাপ্রয়াণ ঘটেছিল বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ সারস্বত সাধক, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। তাঁর এই বিদায় কেবল একজন মানুষের মৃত্যু ছিল না, তা ছিল একটি যুগের অবসান। বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং বাঙালির আত্মপরিচয়ের আকাশে এক গভীর শূন্যতা নেমে এসেছিল।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন এক সুবিশাল বটবৃক্ষের মতো, যাঁর ছায়ায় বেড়ে উঠেছিল আমাদের ভাষা, সাহিত্য ও মনন। তিনি কেবল কবি ছিলেন না—তিনি ছিলেন একাধারে গল্পকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সুরকার, এবং চিত্রশিল্পী। তাঁর লেখা গান, কবিতা, নাটক ও প্রবন্ধ আজও আমাদের জীবনকে নতুন করে ভাবতে শেখায়। তাঁর অনবদ্য সৃষ্টি 'গীতাঞ্জলি' তাঁকে ১৯১৩ সালে এনে দিয়েছিল সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার, যা এশিয়ার প্রথম কোনো লেখকের জন্য এক বিরল সম্মান। তাঁর কলম থেকেই বেরিয়ে এসেছে আমাদের জাতীয় সঙ্গীত 'জন গণ মন', এবং প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত 'আমার সোনার বাংলা'।
২২শে শ্রাবণ আমাদের জন্য কেবল শোকের দিন নয়, এটি আমাদের জন্য আত্মোপলব্ধিরও দিন। এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, কীভাবে একজন মনীষীর জীবন ও দর্শন একটি জাতিকে অনুপ্রাণিত করতে পারে। তাঁর প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতন ও বিশ্বভারতী কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, তা ছিল এক বিশাল জীবনদর্শন। যেখানে তিনি চেয়েছিলেন প্রকৃতির সান্নিধ্যে মানুষ তার সম্পূর্ণ সত্তা নিয়ে বিকশিত হোক, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মেলবন্ধন ঘটুক।
তাঁর শিক্ষা, মানবতাবোধ এবং সৌন্দর্যের প্রতি গভীর অনুরাগ আজও আমাদের পাথেয়। এই দিনটিতে আমরা তাঁর গান গেয়ে, কবিতা আবৃত্তি করে, এবং তাঁর সৃষ্টিকর্ম নিয়ে আলোচনা করে তাঁকে স্মরণ করি। তিনি বিশ্বাস করতেন, মানুষের মৃত্যু হলেও তার সৃষ্টির মৃত্যু নেই। তাই ২২শে শ্রাবণের এই দিনটিও আমাদের শেখায়, শরীর চলে গেলেও তাঁর অমর সৃষ্টিতে তিনি চিরকাল বেঁচে থাকেন।
আজও যখন তাঁর গান বাজে, তখন আমাদের হৃদয়ে এক অন্যরকম শিহরণ জাগে। কবিগুরু নেই, তবুও তিনি আছেন—তাঁর সুরের মূর্ছনায়, ছন্দের ঝংকারে, প্রতিটি শব্দে ও চিন্তায়। তিনি বাঙালির চেতনার মূর্ত প্রতীক, আমাদের অহংকার।
ধন্যবাদ।