যিশুকে ক্রুশবিদ্ধ করার দিনকে ‘গুড’ বলা হয় কেন ? সাথে যীশুর বাণী

খ্রিস্টানদের জন্য, গুড ফ্রাইডে বছরের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন কারণ গুড ফ্রাইডেতে, যীশু স্বেচ্ছায় কষ্ট ভোগ করেছিলেন এবং সাধারন মানুষের পাপের জন্য চূড়ান্ত বলিদান হিসাবে ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছিলেন  ।

মাত্র ৩৩ বছর বয়সে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল যিশুকে। দিনটি ছিল এক শুক্রবার। কিন্তু যে দিনটির সঙ্গে এমন বেদনাদায়ক ইতিহাস সেই দিনটিকে কেন গুড ফ্রাইডে বলা হয়? 

এর পিছনে দুটি তত্ত্বের কথা বলা হয়ে থাকে। এক, ইংরেজিতে, আসলে, "GOOD ফ্রাইডে " শব্দটির উৎপত্তি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে : কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে এটি একটি পুরানো নাম, "GOD'S FRIDAY" থেকে উদ্ভূত হয়েছে। উৎপত্তি যাই হোক না কেন, গুড ফ্রাইডে নামটি সম্পূর্ণরূপে উপযুক্ত।

দুই, গুড ফ্রাইডে বলার কারণ ক্রুশবিদ্ধ করার পর যিশুর মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছিল ৭টি অন্তিম মহান বাক্য। যা আজও এই বিশেষ দিনে স্মরণ করার রীতি প্রচলিত রয়েছে। খ্রিস্টমতাবলম্বীরা এই দিনেই যিশুর ৭টি অন্তিম বাক্য পেয়েছিলেন বলে দিনটিকে মনে করা গুড ফ্রাইডে।

প্রসঙ্গত, যিশুর আত্মবলিদানকেই এই দিন স্মরণ করা হয়। মনে করা হয়, পবিত্র শুক্রবারের দিনটি তিনি সত্যের জয়ের বাণী প্রচার করেছিলেন। মানুষের পাপের ফল ভোগ করে এই যিশুর আত্মত্যাগকেই এই দিন স্মরণ করা হয়। পবিত্র শুক্রবার অর্থাৎ গুড ফ্রাইডের তৃতীয় দিনে যিশু ফের পুনরুজ্জীবিত হন বলে মনে করা হয়। ওই দিনটি ছিল রবিবার। এর পর ৪০ দিন পর্যন্ত তিনি তাঁর অনুগামীদের উপদেশ দিয়ে যান। যিশুর পুনরুজ্জীবন বা রেসারেকশনের ঘটনাটি ইস্টার সানডে হিসেবে পালিত হয়। এদিন সকালে প্রার্থনা করা হয়। যাকে সানরাইজ সার্ভিসও বলা হয়।


আজকের দিনে যীশুর এই বানীগুলো পড়ুন ও শেয়ার করুন 

• আমি সত্য পথ। আমাকে ছাড়া মহাপ্রভু জগতপিতার কাছে যাবার অন্য কোনাে পথ নেই। নরকে যাবার পথ সহজ খুৰ। সেজন্য অনেকেই সে পথ বেছে নেয়। কিন্তু স্বর্গে যাবার পথ খুবই সঙ্কীর্ণ কষ্টকর, খুব কম লােকই সে পথ দিয়ে যায়।

• মানুষকে ভালােবাসাে। মানুষের সকল অপরাধ ক্ষমা করাে। যারা তােমাদের শত্রু তাদেরকেও ভালােবেসাে। মানুষকে ভালােবাসলে ঈশ্বর তােমাদের ভালােবাসবেন।

• ঈশ্বরের নামে পশুকে হত্যা করাে না। মনে রেখাে, ঈশ্বরের করুণা পশুকেও স্পর্শ করে।

• প্রতিবেশীকে সব সময় ভালােবাসবে। প্রতিবেশী বিপদে পড়লে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে। মনে রাখবে এই পৃথিবীতে আমাদের সকলকে পাশাপাশি বসবাস করতে হবে।

• হে পিতা, তুমি এদের ক্ষমা করাে। এরা জানে না এরা কী করছে।

• সব সময় সততার দ্বারা কার্য সাধন করবে। অসৎ উপায়ে হয়তাে সহজে কোনাে কাজ সাধন হবে, কিন্তু তার ফল হবে মারাত্মক।

• মিথ্যে কথা বলবে না। মিথ্যে কথা বললে আত্মার অবমাননা হয়। সত্য পথে থাকার চেষ্টা করবে। শিশু এবং নারীকে আলাদা শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবে। মনে রাখবে এরাই হচ্ছে জগতসংসারের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন।

• বিশ্বপ্রকৃতির সাথে একাত্ম হবার চেষ্টা করবে। নিজেকে বিশ্বপ্রকৃতির ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র অংশ বলে মনে করবে।

• কখনাে বড়মানুষি করবে না। মনে রাখবে, ঈশ্বর সকলকে একই রকম ভাবে ভালােবাসেন।

• শিশু এবং নারীকে আলাদা শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবে। মনে রাখবে এরাই হচ্ছে জগতসংসারের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন।

• সৎ কাজে মনােনিবেশ করবে। প্রথম প্রথম হয়তাে অসুবিধা হবে, কিন্তু দেখবে শেষ পর্যন্ত তােমার মন একেবারে পালটে গেছে।

• ঈশ্বরের করুণাধারা পাহাড় থেকে ছােট বস্তু খন্ডে একই ভাবে ছড়িয়ে আছে। ক্ষুদ্র বস্তু খান্ডের মধ্যে দিয়ে ঈশ্বরের মহত্ব প্রকাশিত হয়।

• অসৎ পথে চললে সাময়িক শান্তি লাভ করা যায় কিন্তু ভবিষ্যতে অনন্ত দুঃখ কষ্টের জগতে প্রবেশ করতে হয়। তাই অসৎ পথ সর্বদা পরিহার করে চলার চেষ্টা করবে।

• জগত-সংসারে সকলের জন্য ভক্তি বিতরণ করবে। একমাত্র ভক্তি দ্বারাই আমরা ঈশ্বরকে স্পর্শ করতে পারি।

• ঈশ্বরকে ভালােবাসবে, ঈশ্বরকে বিশ্বাস করবে। তার কাছে নিজেকে সমর্পণ করবে। সহজ সরল ভাষায় ভগবানকে পুজো করবে। যেভাবে তুমি মা-বাবা, ভাই-বােনের সঙ্গে কথা বললা, ঈশ্বরের সঙ্গে সেভাবেই কথা বলবে।

• অতুল ঐশ্বর্য নিয়ে কিছুই হয় না। মৃত্যুর পর এসব কিছু কি তােমার সঙ্গে যাবে?

• তােমাদের শত্রুকেও ভালােবাসাে। কাউকে ঘৃণা করাে না। তবে তােমরা ঈশ্বরের প্রকৃত সন্তান হবে।

• পাপীতাপী মানুষকে দিতে হবে পবিত্রতার আলাে। অন্ধকারের পথ থেকে মুক্তি দিতে হবে তাদের।

• তােমরা অন্যের দোষ বিচার করার আগে নিজের দোষ বিচার করবে।

• তােমরা ভেবাে না যে, আমার আগে যেসব মহাপুরুষরা জন্মগ্রহণ করেছিলেন, আমি তাদের বাণীকে অস্বীকার করছি। আমি এসেছি তাদেরই সেই বাণীকে নতুন রূপ দেব বলে।

• অপরের কাছ থেকে যেরকম ব্যবহার তুমি আশা করছ, ঠিক সেই রকম ব্যবহারই তুমি তাদের সঙ্গে করবে। তবে তুমি অন্যের কাছ থেকে ভালােবাসা পাবে।

• আমার কথা শুনে যে কাজ করবে, সেই-ই হবে যথার্থ মানুষ, কোনাে কিছুই তাকে বিচলিত করতে পারবে না।

• তােমরা মনে ভেবাে, যতদিন না স্বর্গ-মর্ত্য ধ্বংস হবে, ততদিন এই শিক্ষা উপদেশ একবিন্দু ধ্বংস হবে না।

• তােমরা দুঃখ করাে না। আমার মৃত্যুর পর এই পৃথিবীতে স্বর্গরাজ্য প্রতিষ্ঠিত হবে।

• ঈশ্বরকে শুধু পিতা বলে স্বীকার করলে হবে না। মানুষের মধ্যে যেমন পিতা-পুত্রের সম্পর্ক, ঈশ্বরের সঙ্গেও তেমনই মধুর আত্মিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। তার কাছে নিজেকে আত্মসমর্পণ করবে। মানুষ যখন শ্রদ্ধা, বিশ্বাস আর ভালােবাসায় ঈশ্বরকে বাঁধতে পারবে, তখন এই পৃথিবীতে স্বর্গরাজ্য সৃষ্টি হবে।

• কেউ যদি কোনাে পাপ করে, তাহলে তার বিচার করবার ক্ষমতা আমার নেই। কারণ আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যে জীবনে কোনােদিন কোনাে পাপ করেনি। আমাদের কর্তব্য মানুষকে ভালােবাসা। আমরা যেন পাপকে ঘৃণা করি, পাপীকে নয়।

• ক্ষুদ্র শিশুগুলিকে আমার নিকট আসিতে দাও, তাহাদের নিষেধ করিও না। কারণ এরাই ঈশ্বর রাজ্যের অধিকারী।

• ঈশ্বর চৈতন্য স্বরূপ; এবং যাহারা তাহার উপাসনা করিবে অবশ্যই ভাবে এবং সত্যে করিবে।

• আমরা এই পৃথিবীতে কিছুই লইয়া আসি নাই, এবং আমরা যে কিছুই লইয়া যাইতে পারি না, তাহাও নিশ্চিত। সুতরাং আমরা যেন অন্নবস্ত্রেই সুখে থাকি।

• যত লােক পবিত্রতা দ্বারা পরিচালিত হন তারা ঈশ্বরের সন্তান। হায় ঈশ্বর, হায় ঈশ্বর, তুমি আমাকে পরিত্যাগ করলে কেন?

(যীশুখ্রীষ্ট ক্রুশ বিদ্ধ হবার সময়)

• যে সকল বস্তুতে রাজার অধিকার তাহা রাজাকে সম্প্রদান কর, আর যেসকল বস্তুতে ঈশ্বরের অধিকার তাহা ঈশ্বরকে সমর্পণ কর।